ঢাকা, ১২ ডিসেম্বর২০২২ইং (দেশপ্রেম রিপোর্ট): আজ সোমবার সকাল ১০টায় চট্টগ্রাম মহানগরের এম এ আজিজ স্টেডিয়াম সংলগ্ন জিমনেশিয়াম মাঠে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে প্রধান বক্তার বক্তব্যে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ এমপি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপিকে তাদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে পরিকল্পনা করার পরামর্শ দিলেন।
আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, ‘বিএনপির মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীরা হতাশ। ১০ ডিসেম্বরকে ঘিরে তারা কী স্বপ্ন দেখেছিল, আর কী দেখল। বিএনপির সেই নেতাকর্মীরা মনের দুঃখে বাড়ির পথ ধরেছে। তাদের আন্দোলন আন্দোলন খেলা শেষ হয়ে গেছে।
আগামী দিনে অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে পরিকল্পনা নেয়ার জন্য বিএনপি নেতাদের পরামর্শ দিয়ে হানিফ বলেন, ‘এক বছর পর জাতীয় সংসদ নির্বাচন। বিএনপি দলের নেতাকর্মীদের আর রাজপথে টেনে আনতে পারবে না। তারা বুঝতে পেরেছে বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব তাদের বলির পাঠা বানাচ্ছে, ধোঁকাবাজির রাজনীতি করেছে।’
হানিফের দাবি, ‘১০ তারিখের সমাবেশ প্রমাণ করেছে বিএনপি একটা মিথ্যাবাদী, ভাওতাভাজির দল।’ তিনি বলেন, ‘এতোদিন জনগণের সঙ্গে ভাওতাভাজি করেছে এখন দলের নেতাকর্মীদের সাথে করছে। মহাসমাবেশ হলে বেগম খালেদা জিয়া জনসভায় বক্তব্য দিবেন নেতাকর্মীদের আশ্বাস দিয়ে, প্রলোভন দেখিয়ে নেতাকর্মীদের ঢাকায় এনেছে। ১০ তারিখের পর নাকি দেশ খালেদা জিয়ার কথায় চলবে। এই মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে ঢাকায় এনেছিল। এখন কী? কোথায় খালেদা জিয়া? এতিমের টাকা আত্মসাৎ করায় আদালত কর্তৃক দণ্ডিত। বঙ্গবন্ধুকন্যার দয়ায় বাসায় বসে চিকিৎসা নিচ্ছেন।’
জাতীয় সংসদের সাড়ে ৩০০ জন সদস্যের মধ্যে সাতজনের পদত্যাগে সংসদের কার্যক্রমে কোনো ব্যাঘাত ঘটবে না উল্লেখ করে হানিফ বলেন, ‘সমাবেশ থেকে বিএনপির সাতজন এমপি পদত্যাগ করলেন। মিডিয়ায় বড় খবর নিয়ে আসলেন। বিএনপি নেতারা বিরাট কিছু হবে এই আশা দিয়ে নেতাকর্মীদের ঢাকায় এনেছেন। যখন দেখলেন কিছুই হলো না, তখন লজ্জায় নেতাকর্মীদের মনোবল টিকিয়ে রাখতে পদত্যাগ করেছেন।’
আওয়ামী লীগের এই জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, ‘বিএনপির ওপর দেশের মানুষের আস্থা নেই। মানুষ কার ওপর আস্থা রাখবে। বিএনপির নেতা কে? তাদের মূল নেতা নাকি তারেক রহমান! যে তারেক একাধিক হত্যা, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের দায়ে বিদেশে পলাতক। সে কি রাজনীতি করেছে কখনো। প্রধানমন্ত্রীর ছেলে হিসেবে হাওয়া ভবন বানিয়ে দুর্নীতি করেছে, কমিশন বাণিজ্য করেছে। এসব দুর্নীতির বিরুদ্ধে যাতে কেউ কথা বলতে না পারে সেজন্য সারাদেশে আওয়ামী লীগের ২৬ হাজার নেতাকর্মীকে হত্যা করেছে।’
তারেক রহমান সন্ত্রাসীদের গডফাদার উল্লেখ করে হানিফ বলেন, ‘সে দেশকে জঙ্গিবাদের চারণভূমি বানিয়েছিল। ১২৫টি ছোট-বড় জঙ্গিগোষ্ঠীর পৃষ্ঠপোষক ছিল। কখনোই রাজনৈতিক ছিল না। যে দলের নেতা সন্ত্রাসীদের গডফাদার সেই দলের প্রতি মানুষের আস্থা থাকতে পারে না। গত ১০ ডিসেম্বর দেশের মানুষ বিএনপির প্রতি অনাস্থা প্রকাশ করেছে।’
আওয়ামী লীগ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘১০ ডিসেম্বর ঘিরে এমন একটা ভাব হয়েছিল যেন দেশে একটা ভয়ঙ্কর কিছু ঘটে যাচ্ছে। বিদেশি একজন রাষ্ট্রদূত আমাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, ১০ তারিখে কী হচ্ছে? আমি বলেছি, কী হবে? মাথায় কি আকাশ ভেঙে পড়বে। বিএনপির ভাবখানা এমন ছিল যেন আকাশ ভেঙে পড়বে। আকাশের জায়গায় আকাশ আছে, ভেঙে পড়েনি। আকাশ ভাঙার স্বপ্ন দেখেছেন তারাই ভেঙে পড়েছে।’
দেশের মানুষকে বিএনপির প্রতিষ্ঠাকালের দিকে লক্ষ্য করার আহ্বান জানিয়ে হানিফ বলেন, ‘বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান ক্যান্টনমেন্টে বসে অবৈধপন্থায় দল গঠন করেছিল। যে দলের সৃষ্টি অবৈধ তাদের দ্বারা জনগণের কল্যাণ হতে পারে না।’
স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমান- বিএনপি নেতাদের এমন দাবির প্রেক্ষিতে হানিফ বলেন, ‘তাদের মিথ্যাচারের কাহিনি দেখেন। মার্চ মাসের ৭ তারিখ ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার ডাক দিয়েছিলেন। ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানিরা যখন গণহত্যা শুরু করেছিল তখন পূর্ব রেকর্ডকৃত বঙ্গবন্ধুর বক্তব্য ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে প্রচার হয়েছিল। ২৬ মার্চ দিনে জেনারেল ইয়াহিয়া বলেছিলেন, শেখ মুজিব ডিক্লেয়ার ইনডিপেনডেন্স। হি ইজ অ্যা ট্রেইটর। তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, শাস্তি পেতে হবে।’
হানিফ বলেন, ‘২৬ তারিখে কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে বঙ্গবন্ধুর পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করেছিলেন তৎকালীন চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম এ হান্নান। এরপর আরও দুইজন পাঠ করেছেন। ২৭ মার্চ বিকাল সাড়ে চারটার পরে বঙ্গবন্ধুর পক্ষে জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করেন। এটা করেই তিনি হয়ে গেলেন স্বাধীনতার ঘোষক। স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করার জন্য যদি কেউ ঘোষক হয়ে যান তাহলে সেই ঘোষকের স্বীকৃতি পাবেন হান্নান।’
যদি জিয়াই স্বাধীনতার ঘোষক হবেন, তাহলে বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস ২৬ মার্চ কেন? এমন প্রশ্নও রাখেন হানিফ।
আওয়ামী লীগের এই সিনিয়র নেতা বলেন, ‘১৯৯১ সালে নির্বাচনে বিজয়ের পর বেগম খালেদা জিয়ার জীবনবৃত্তান্ত পত্রিকায় ছাপা হয়েছিল। জন্মদিন ছিল ৫ সেপ্টেম্বর। তার পাসপোর্টে জন্মদিন ৯ সেপ্টেম্বর। ১৫ আগস্ট গোটা জাতি যেদিন শোকাহত, ১৯৯৩ সালে হঠাৎ দেখলাম সেদিন খালেদা জিয়া বানানো জন্মদিন পালন করা শুরু করলেন। এই মিথ্যাচার বিএনপি বংশ পরম্পরায় পেয়ে এসেছে।’
এসময় গত ৪ ডিসেম্বর চট্টগ্রামের পলোগ্রাউন্ড অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের সমাবেশকে জনসমুদ্রে রূপ দেয়ায় ধন্যবাদ জানিয়ে হানিফ বলেন, ‘বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্র থেকে সম্ভাবনাময় রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছেন শেখ হাসিনা। আমাদের লক্ষ্য ২০৪১ সালে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের উন্নত বাংলাদেশ গড়া। আর উন্নত বাংলাদেশ গড়তে হলে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে বিজয়ী করে আনতে হবে।’
চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহমদের সভাপতিত্বে সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এমপি। সম্মেলন উদ্বোধন করেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন।
সম্মেলনে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ। এছাড়া আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ, জাতীয় সংসদের হুইপ সামশুল হক চৌধুরী, শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, আওয়ামী লীগের অর্থ ও পরিকল্পনা সম্পাদক বেগম ওয়াসিকা আয়েশা খান, দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া এবং উপ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন।
Leave a Reply